বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য সুখবর! শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এই প্রস্তাবে সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রাক্কলনসহ শতকরা হারে ভাতা নির্ধারণের জন্য বিশদ আলোচনার অনুরোধ করা হয়েছে। শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ জীবনযাত্রার ব্যয় মোকাবিলায় একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন এবং পুলিশি হামলার ঘটনা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
প্রস্তাবের বিস্তারিত: বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ. জে.ডি. মোরশেদ আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পান, যা মূল্যস্ফীতির কারণে অপ্রতুল। নতুন প্রস্তাবে মূল বেতনের ৫, ১০, ১৫ বা ২০ শতাংশ হারে ভাতা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দিলরুবা শাহীনার কক্ষে যুগ্ম সচিব ও উপসচিবদের নিয়ে এই বিষয়ে রুদ্ধদ্বার আলোচনা চলছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্দোলনের পটভূমি: শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির দাবি ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে উত্থাপিত হচ্ছে। ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় ভাতা ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা করার ঘোষণা দিলেও শিক্ষকরা শতকরা হারে বৃদ্ধির দাবিতে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের নেতৃত্বে তারা তিন দফা দাবি তুলে ধরেছেন: বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ, চিকিৎসা ভাতা ১০০০ টাকা এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ। এই দাবি না মানায় ১২ অক্টোবর থেকে সারা দেশে কর্মবিরতি শুরু হয়।
আন্দোলনের ঘটনাক্রম ও হতাহত: ১২ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে ১০-১৫ জন শিক্ষক আহত হন এবং ২-৩ জনকে আটক করা হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। ১৩ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী কর্মবিরতি শুরু হয়, এবং ১৪ অক্টোবর ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধায় আরও ৫-১০ জন আহত হন। আজ ১৫ অক্টোবর শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়, এবং বিকেলে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে ফিরে যান। মোট ১৫-২৫ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন, তবে কোনো মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়নি। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়ে সংলাপের আহ্বান করেছে।
চলমান কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: আজ শাহবাগ ব্লকেডের পর শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন। আগামীকাল ১৬ অক্টোবর ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দুপুর ১২টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন না হলে শহীদ মিনার থেকে যমুনা নদী অভিমুখে লংমার্চ শুরু হবে। সারা দেশে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে, যা শিক্ষা খাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “আমাদের দাবি মানা না হলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে; প্রয়োজনে আমরণ অনশন হবে।” X-এ #Bangladesh #stopYunus হ্যাশট্যাগে শিক্ষকরা বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে সমর্থন আদায় করছেন।
সম্ভাব্য প্রভাব ও সমর্থন: বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ হলে সরকারের বাজেটে ৫০০-১০০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষকদের সমর্থন জানিয়ে সরকারকে দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। শিক্ষকদের এই আন্দোলন শুধু ভাতার দাবি নয়, বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যেরও প্রতিফলন। পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কায় সংলাপের মাধ্যমে সমাধান জরুরি।
আরও আপডেটের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (moedu.gov.bd) বা নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম চেক করুন।

